Saturday, February 14, 2015

জ্যামিতি শিক্ষার আসর ( A - Z )

জ্যামিতি,পরিমাপ ও রাশি ( পর্ব-১ )

জ্যামিতি কি?

জিওমেট্রি এর অর্থ জ্যামিতি । 'জিও' মানে ভূমি আর 'মেট্রি' মানে মাপ। অর্থাৎ জিওমেট্রি এর অর্থ দাঁড়ায় ভূমির পরিমাপ। প্রকৃতপক্ষে ভূমির পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার চিহ্ন ও তাদের ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যের বিচার-বিশ্লেষণ জ্যামিতির আওতাভুক্ত।

 পরিমাপ কি?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রতিটি কাজের সাথেই মাপ-জোখের ব্যাপারটি জড়িত। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম মাপ-জোখের প্রয়োজন হয়। পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সকল পরীক্ষণেই পদার্থের পরিমাণ, বলের মান, অতিবাহিত সময়, শক্তির পরিমাণ ইত্যাদি জানতে হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এ মাপ-জোখের বিষয়টাকে বলা হয় পরিমাপ। সুতরাং,কোন কিছুর পরিমাণ নির্ণয় করাকে পরিমাপ বলা হয়।

পরিমাপের আলোচ্য বিষয়সমূহ - পরিমাপের একক, মৌলিক রাশি, লব্ধ রাশি, রাশির মাত্রা, এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ইত্যাদি পরিমাপের বিভিন্ন অালোচ্য বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম।

পরিমাপের একক

যে কোন পরিমাপের জন্য একটি আদর্শের প্রয়োজন, যার সাথে তুলনা করে পরিমাপ করা হয়। এ নির্দিষ্ট পরিমাপের সাথে তুলনা করে সমগ্র ভৌত রাশিকে পরিমাপ করা যায়, পরিমাপের এ আদর্শ পরিমাণকে বলা হয় পরিমাপের একক। যেমন- একটি লাঠির দৈর্ঘ্য ৫মিটার। উদাহরণটিতে 'মিটার' হল দৈর্ঘ্যের একক এবং ৫ মিটার বলতে বোঝায় পাঁচটি এক মিটারের পাঁচ গুণ দৈর্ঘ্য। ক্ষেত্রফল, আয়তন, ভর, শক্তি, ত্বরণ, বল, সময় ইত্যাদি মাপার জন্য ভিন্ন ভিন্ন একক রয়েছে। পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতিতে আবার এদের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। এককগুলো হবে সুবিধাজনক আকারের, যা সহজে ও সঠিকভাবে পুনরুৎপাদন করা যায়। এ এককগুলো আবার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এক কথায়, যে আদর্শ পরিমাপের সাথে তুলনা করে ভৌত রাশিকে পরিমাপ করা হয়, তাকে পরিমাপের একক বলা হয়।

নিম্নে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে মৌলিক এককগুলের জন্য সর্বশেষ গৃহীত আদর্শ উপস্থাপন করা হল -
  • দৈর্ঘ্যের একক (মিটার)
  • ভরের একক (কিলোগ্রাম)
  • সময়ের একক (সেকেন্ড)
  • তাপমাত্রার একক (কেলভিন)
  • তড়িৎ প্রবাহের একক (অ্যাম্পিয়ার)
  • দীপন ক্ষমতার একক (ক্যান্ডলা)
  • পদার্থের পরিমাণের একক (মোল)

এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি

দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই পরিমাপের প্রচলন ছিল। এই পরিমাপের জন্য বিভিন্ন রাশির স্থানীয় বা এলাকা ভিত্তিক বহু একক প্রচলিত ছিল। যেমন: কিছুকাল পূর্বেও আমাদের দেশে ভরের একক হিসেবে মণ, সের ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। আবার দূরত্ব নির্দেশের একক হিসেবে মাইল কিংবা দৈর্ঘের জন্য গজ, ফুট, ইঞ্চি ইত্যাদি এখনো প্রচলিত আছে। বৈজ্ঞানিক তথ্যের আদান-প্রদান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য সারা বিশ্বে পরিমাপের একই রকম আদর্শের প্রয়োজন পড়ে। এ থেকে ১৯৬০ সালে গোটা বিশ্বে বিভিন্ন রাশির একই রকম একক চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। এককের এ পদ্ধতিকে বলা হয় এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বা সংক্ষেপে এস.আই।

সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি চালুর পূর্বে বৈজ্ঞানিক হিসাব-নিকাসের ক্ষেত্রে এককের তিনটি পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, যথা-
  •  সি.জি.এস (CGS)
  • এম.কে.এস (MKS) এবং
  •  এফ.পি.এস (FPS)।

ভূমি পরিমাপ

ভূমির পরিমাণ পদ্ধতি ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপ হলো: (১) ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক (২) কাঠা, (৩) বিঘা এবং (৪) একর এই পরিমাপ সর্ব এলাকায় সর্বজন গৃহীত। এটা সরকারি মান ( Standard Measurement) বলে পরিচিত।
এই পরিমাপের কয়েকটি নিম্নে দেওয়া হলো -
ইঞ্চি, ফুট ও গজ
  • ১২ ইঞ্চি = ১ ফুট এবং
  •  ৩ ফুট= ১ গজ
ভূমি যে কোন সাইজের কেন ভূমির দের্ঘ্য ও প্রস্থে যদি ৪৮৪০ বর্গগজ হয় তাহলে এটা ১.০০ একর (এক একর) হবে । যেমনঃ ভূমির দৈর্ঘ্য ২২০ গজ এবং প্রস্থ ২২ গজ সুতরাং ২২০ গজ×২২ গজ= ৪৮৪০ বর্গগজ।

কাঠা, বিঘা ও একরের মাপ

  • ১৬ ছটাক = ১/ কাঠা
  • ০.০১৬৫ অযুতাংশ = ১/কাঠা
  • ০.৩৩ শতাংশ বা ০.৩৩০০ অযুতাংশ = ১ বিঘা
  • ২০ (বিশ) কাঠা = ১ বিঘা
  • ৩ বিঘা = ১.০০ একর।
[একশত শতাংশ বা এক হাজার সহস্রাংশ বা দশ হাজার অযুতাংশ= ১.০০ (এক) একর। দশমিক বিন্দুর (.) পরে চার অঙ্ক হলে অযুতাংশ পড়তে হবে।]

মিলিমিটার ও ইঞ্চি-

  • ১ মিলিমিটার= ০.০৩৯৩৭ (প্রায়)
  • ১ সেন্টিমিটার= ০.০৩৯৩৭ (প্রায়)
  • ১ মিটার = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি বা ৩.২৮ ফুট/ ১.০৯৩ গজ (প্রায়)
  • ১০০০ মিটার = ১ কিলোমিটার
  • ১ কিলোমিটার= ১১ শত গজ
  • ২ কিলোমিটার = (সোয়া মাইল)
  • ১৭৬০ গজ = ১ মাইল
  • ১৩২০ গজ = পৌন এক মাইল।
  • ৮৮০ গজ = আধা মাইল
  • ৪৪০ গজ = পোয়া মাইল।
  • ১ বর্গ মিটার = ১০.৭৬ বর্গফুট (প্রায়)
  • ১ হেক্টর = ২.৪৭ একর (প্রায়)
  • ১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সেন্টিমিটার (প্রায়)

গান্টার শিকল জরীপ

ভূমির পরিমাপ পদ্ধতি সঠিক এবং সহজ করার জন্য ফরাসি বিজ্ঞানী এডমন্ড গান্টা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি ভূমি পরিমাপের জন্য ইস্পাত দ্বারা এক ধরণের শিকল আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে তার নাম অনুসারেই এই শিকলের নামকরণ করা হয় গান্টার শিকল। আমাদের দেশে গান্টার শিকল দ্বারা জমি জরিপ অত্যন্ত জনপ্রিয়। একর, শতক এবং মাইলষ্টোন বসানোর জন্য গান্টার শিকল অত্যন্ত উপযোগী। এই শিকলের দৈর্ঘ্য ২০.৩১ মিটার (প্রায়) বা ৬৬ ফুট।গান্টার শিকল ভূমি পরিমাপের সুবিধার্থে একে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয় থাকে। এর প্রতিটি ভাগকে লিঙ্ক বা জরীপ বা কড়ি বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।

লিঙ্ক এর সাথে ফুট ও ইঞ্চির পরিবর্তন

  • লিঙ্ক = ৭.৯ ইঞ্চি
  • ৫ লিঙ্ক = ৩ ফুট ৩.৬ ইঞ্চি
  • ১০ লিঙ্ক = ৬ ফুট ৭.২ ইঞ্চ
  • ১৫ লিঙ্ক = ৯ ফুট ১০.৮ ইঞ্চি
  • ২০ লিঙ্ক = ১৩ ফুট ২.৪ ইঞ্চি
  • ২৫ লিঙ্ক = ১৬ ফুট ৬.০ ইঞ্চি
  • ৪০ লিঙ্ক = ২৬ ফুট ৪.৮ ইঞ্চি
  • ৫০ লিঙ্ক = ৩৩ ফুট
  • ১০০ লিঙ্ক = ৬৬ ফুট

একর শতকে ভূমির পরিমাপ

১০০ লিঙ্ক = ১ গান্টার শিকল ১০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ শতক ১,০০,০০০ বর্গ লিঙ্ক = ১ একর
আমাদের দেশে জমি-জমা মাপ ঝোকের সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভূমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয় এবং আমিন সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যাক্তিগণ ভূমি মাপার সময় ফিতা ব্যবহার করেন। ভূমির পরিমাণ বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহার করাই বেশি সুবিধাজনক।
বিভিন্ন প্রকারের আঞ্চলিক পরিমাপ
আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রকারের মাপ ঝোক প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হলো কানি-গন্ডা, বিঘা-কাঠা ইত্যাদি। অঞ্চলে ভেদে এই পরিমাপগুলো আয়তন বিভিন্ন রকমের হয়ে তাকে। বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির পরিমাপ বিভিন্ন পদ্ধতিতে হলেও সরকারি ভাবে ভূমির পরিমাপ একর, শতক পদ্ধতিতে করা হয়। সারাদেশে একর শতকের হিসাব সমান ।
কানিঃ কানি দুই প্রকার। যথা-
  • কাচ্চা কানি 
  • সাই কানি

কাচ্চা কানি - 

 ৪০ শতকে এক বাচ্চা কানি। কাচ্চা কানি ৪০ শতকে হয় বলে একে ৪০ শতকের কানিও বলা হয় । 

সাই কানি - 

এই কানি কোথাও ১২০ শতকে ধরা হয়। আবার কোথাও কোথাও ১৬০ শতকেও ধরা হয়।

কানি গন্ডার সাথে বিভিন্ন প্রকারের পরিমাপের তুলনা

  • ২ কানি ১০ গন্ডা (৪০ শতকের কানিতে) = ১ একর
  • ১ কানি = ১৭২৮০ বর্গফুট
  • ১ কানি = ১৯৩৬ বর্গগজ
  • ১ কানি = ১৬১৯ বর্গমিটার
  • ১ কানি = ৪০ বর্গ লিঙ্ক
  • ১ একর = ১০ বর্গ চেইন
  • ১ একর = ১০০ শতক
  • ১ একর = ৪,০৪৭ বর্গমিটার
  • ১ একর = ৩ বিঘা ৮ ছটাক
  • ১ একর = ৬০.৫ কাঠা
  • ১ শতক = ১ গন্ডা বা ৪৩২.৬ বর্গফুট

বিঘা-কাঠার হিসাব

  • ১ বিঘা = (৮০ হাত×৮০ হাত) ৬৪০০ বর্গহাত
  • ১ বিঘা = ২০ কাঠা
  • ১ কাঠা = ১৬ ছটাক
  • ১ ছটাক = ২০ গন্ডা
  • ১ বিঘা = ৩৩,০০০ বর্গলিঙ্ক
  • ১ বিঘা = ১৪,৪০০ বর্গফুট
  • ১ কাঠা = ৭২০ বর্গফুট
  • ১ ছটাক = ৪৫ বর্গফুট

এয়র হেক্টর হিসাব

  • ১ হেক্টর = ১০,০০০
  • ১ হেক্টর = ২.৪৭ একর
  • ১ হেক্টর = ৭.৪৭ বিঘা
  • ১ হেক্টর = ১০০ এয়র

ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি লিখন, সরকারি হিসাব ও অফিসের কাজ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে ভূমির পরিমাপ হলো
  • ডেসিমেল বা শতাংশ বা শতক
  • কাঠা,
  • বিঘা এবং
  • একর
এই পরিমাপ সর্ব এলাকায় সর্বজন গৃহীত। এটা "সরকারিমান" ( Standard Measurement) বলে পরিচিত। আমাদের দেশে ও বাংলাদেশে জমি-জমা মাপ ঝোকের সময় চেইনের সাথে ফিতাও ব্যবহার করা হয়। সরকারি ভাবে ভূমি মাপার সময় চেইন ব্যবহার করা হয় এবং আমিন সার্ভেয়ার ইত্যাদি ব্যাক্তিগণ ভূমি মাপার সময় ফিতা ব্যবহার করেন। ভূমির পরিমান বেশি হলে চেইন এবং কম হলে ফিতা ব্যবহার করাই বেশি সুবিধাজনক। 

এই পোষটির জন্য বাংলা উকিপিডিয়া থেকে সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এর পরের পোষ্টে জামিতির আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুত্র আলোচনা করা হবে। তক্ষণে সঙ্গে থাকুন। লেখা ভুল-ভ্রান্তি হলে জানাবেন। ধন্যবাদ।
Previous Post
Next Post